শিশুদের উন্নয়নের জন্য ইউনিসেফের জাতীয় দূত হলেন করিনা

Latest news

কলকাতা : রুপোলি পর্দার জনপ্রিয় বলিউড অভিনেত্রী করিনা কাপুর খান ভারতবর্ষের শিশুদের বিকাশের জন্য এগিয়ে এলেন। সম্প্রতি, এই তারকার সাফল্যের মুকুটে যুক্ত হল নয়া পালক। সারা দেশের শিশুদের উন্নয়নের জন্য ভারতের জাতীয় দূত (National Ambassador) হিসাবে তিনি ইউনিসেফের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করবেন

এই দেশে ইউনিসেফের কাজকর্মের ৭৫তম বর্ষে, রাষ্ট্রসংঘের সংস্থাটি আইকনিক এই তারকাকে তাদের জাতীয় দূত হিসাবে নিয়োগ করেছে। তাঁর এই নতুন ভূমিকায় করিনা দেশের প্রতিটি শিশুর প্রারম্ভিক শৈশব বিকাশ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং লিঙ্গ সমতার অধিকারকে এগিয়ে নিতে যেতে ইউনিসেফকে সাহায্য করবেন।

শনিবার নয়াদিল্লিতে এই সম্মান গ্রহণের পর করিনা কাপুর খান তাঁর খুশি ব্যক্ত করে জানান যে এই পৃথিবীর শিশুদের অধিকার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। “ইউনিসেফের জাতীয় দূত হিসেবে রাষ্ট্রসংঘের এই সংস্থাটির সাথে কাজকর্ম চালিয়ে যেতে পারব দেখে আমি খুবই সম্মানিত বোধ করছি। আমার বক্তব্যের মাধ্যমে ও প্রভাব খাটিয়ে আমি দুর্বল ও বঞ্চিত শিশুদের জন্য তাদের অধিকার অর্জনের চেষ্টা করব। কারণ, একটি শৈশব, একটি ন্যায্য সুযোগ ও একটি নিশ্চিত ভবিষ্যত প্রতিটি শিশুর প্রাপ্য,” তিনি জানান।

প্রসঙ্গত, ইউনিসেফের সাথে করিনা গত প্রায় এক দশক ধরে সেলিব্রিটি অ্যাডভোকেট হিসেবে বিভিন্ন কাজ করেছেন। তখন মেয়েদের শিক্ষা, লিঙ্গ সমতা, মৌলিক শিক্ষা, টিকাদান এবং শিশুদের মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য তিনি জোর সওয়াল করতেন। কোভিড অতিমারীর সময়, তিনি বাচ্চাদের পড়াশুনা ও বিদ্যালয় খোলার সাথে সাথে তাদের সেখানে যোগদানের জন্য আবেদন জানান। করিনা #EveryChildRights-এর উপর ইউনিসেফের বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন প্রচারাভিযানে বিশেষ সহায়কের ভূমিকা পালন করেছেন।

এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ইউনিসেফের ভারতের প্রতিনিধি (UNICEF India Representative) সিনথিয়া ম্যাকক্যাফ্রে (Cynthia McCaffrey) বলেন, “জাতীয় দূত হিসেবে করিনা কাপুর খানকে আমরা স্বাগত জানাই কারণ শিশুদের অধিকার সুরক্ষার প্রশ্নে, তিনি বছরের পর বছর ধরে অঙ্গীকারবদ্ধ। বিভিন্ন জাতীয় এবং বিশ্বব্যাপী প্রচারাভিযানে অংশগ্রহণ করে তিনি এইসব কাজকর্মে শক্তি জুগিয়েছেন ও প্রভাব বিস্তার করেছেন। আরো চারজন যুব প্রবক্তা (Youth Advocates) নিযুক্ত হয়েছেন এবং আমরা এঁনাদের সাথে শিশুদের অধিকার সুরক্ষার জন্য একসাথে কাজ করব।”

ইউনিসেফ এই প্রথম ষোলো থেকে চব্বিশ বছর বয়সী এই যুব প্রবক্তাদের নিয়োগ করেছে। এনারা মূলতঃ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, মানসিক স্বাস্থ্য, উদ্ভাবন এবং মেয়েদের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত শিক্ষার মতো বিষয়ে পিয়ার লিডার ও চ্যাম্পিয়ন।

চারজনের মধ্যে মধ্যপ্রদেশের গৌরানশী শর্মা (Gauranshi Sharma) খেলাধূলার অধিকার ও প্রতিবন্ধীদের অংশগ্রহণ, উত্তরপ্রদেশের কার্তিক ভার্মা (Kartik Verma) জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও শিশু অধিকারের পক্ষে সওয়াল করার জন্য এবং আসামের নাহিদ আফরিন (Nahid Afrin) মানসিক স্বাস্থ্য ও প্রাথমিক শৈশব বিকাশের বিষয়ে উৎসাহ দানের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। চতুর্থজন, তামিলনাড়ুর বিনিশা উমাশঙ্কর (Vinisha Umashankar) একজন উদীয়মান উদ্ভাবক এবং মেয়েদের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত শিক্ষার মতো বিষয়ে পথিকৃৎ।

কার্তিকের মতে, আজকের যুবক-যুবতীরাই ভারতে পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিতে পারে। তিনি শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের বিশেষত যাঁরা প্রান্তিক এবং দুর্বল সম্প্রদায়ভুক্ত তাদের নানাধরণের সমস্যার কথা বিভিন্ন মানুষের কাছে তুলে ধরবেন বলে জানান। আর এক যুব প্রবক্তা নাহিদ বলেন যে তিনি এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মানসিক সমস্যা সহ বিভিন্ন বিষয় যেগুলিতে যুবসম্প্রদায় ভুগছেন সেগুলি তুলে ধরবেন।

এই প্রসঙ্গে, ইউনিসেফের ভারতবর্ষের প্রতিনিধি ম্যাকক্যাফ্রে আরও জানান যে গত সাড়ে সাত দশক ধরে রাষ্ট্রসঙ্ঘের এই সংস্থা ভারত সরকারের নেতৃত্বাধীন বিভিন্ন কর্মসূচিকে সাহায্য করেছে যা থেকে লক্ষ লক্ষ শিশু এবং যুবক-যুবতীরা উপকৃত হয়েছেন।

ভারতবর্ষ এবং ইউনিসেফের গত পঁচাত্তর বছরের যৌথ কর্মকান্ড আগামীদিনে শিশুদের পথচলাকে সুগম করবে। এই যৌথ সহযোগিতাকে আরো সুদৃঢ় করতে ইউনিসেফ অঙ্গীকারবদ্ধ। আগামীদিনে তাদের নিশ্চিত ভবিষৎ গড়তে জাতীয় দূত, যুব প্রবক্তা ও সেলিব্রিটিদের সাথে আমাদের কাজকর্ম জারী থাকবে,” ম্যাকক্যাফ্রে জানান।

প্রসঙ্গত, আর এক বলিউড অভিনেতা আয়ুষ্মান খুরানাও ইউনিসেফের একজন জাতীয় দূত হিসেবে শিশুদের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *